সম্পদ সৃষ্টির উপাদানসমূহ – Resource Creating Factors | Resource – Geography

Geography of Resource

‘সম্পদ সৃষ্টি হয়, প্রকৃতি, মানুষ ও সংস্কৃতির পারস্পরিক ক্রিয়ায়’ (Resource is a result of the interactions of nature, man and culture)। এই পারস্পরিক ক্রিয়া সম্পদ উৎপাদনের লক্ষ্য কতখানি অর্জন করতে সক্ষম হবে তা নির্ভর করে প্রকৃতি, মানুষ ও সংস্কৃতি কোন একটি উপাদানের ওপর নয়, তিনটির সম্মিলিত ক্রিয়া ও প্রক্রিয়ার ওপর। প্রকৃতি কোথাও সম্পদ সৃষ্টির প্রচুর উপকরণ দিয়েছে অথচ মানুষের বসবাসের অভাবে শ্রমশক্তির অভাব রয়েছে (উদাহরণ অস্ট্রেলিয়া) ; আবার কোথাও প্রকৃতি ও মানুষ উভয়ই সম্পদ সৃষ্টির অনুকূল কিন্তু প্রযুক্তিগত উন্নতির অভাবে সম্পদ সৃষ্টি পিছিয়ে আছে (উদাহরণ ভারত, ব্রেজিল)। এমনও আছে যে মানুষ ও তার সংস্কৃতি উন্নত কিন্তু প্রকৃতির উপকরণের অভাব রয়েছে। সেক্ষেত্রে অনেক দেশ কাঁচামাল আমদানি করে এবং দেশজ উপকরণের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে এগিয়ে গেছে (উদাহরণ জাপান, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড)। এখন সম্পদ সৃষ্টিতে এই তিনটি উপাদানের ভূমিকা কীরূপ তা আলোচনা করা হলো—

 প্রকৃতি (Nature) : প্রকৃতি বা প্রাকৃতিক পরিবেশ হল সম্পদের প্রাথমিক ভাণ্ডার। প্রাকৃতিক পরিবেশে দু’ধরনের সম্পদ পাওয়া যায়, যেমন— অপুনর্ভব গচ্ছিত সম্পদ (Non-renewable fund resources) ও পুনর্ভব প্রবহমান সম্পদ (Renewable flow resources)। প্রাকৃতিক সম্পদগুলির মধ্যে নানারকম সমন্বয় ঘটিয়ে নতুন সম্পদ সৃষ্টি করা যায়। এর ফলে সম্পদের কার্যকারিতা বাড়ে। এই কাজে বিরাট ভূমিকা নেয় মানুষ ও সংস্কৃতি ।

জিমারম্যান বলেছেন— প্রকৃতির সাহায্য, নির্দেশ ও সম্মতি নিয়েই সম্পদের সৃষ্টি হয়। ভূপৃষ্ঠের উপরে মাটি, নদ-নদী, উদ্ভিদ, জীবজন্তু, বায়ুমণ্ডল এবং ভূপৃষ্ঠের নিচে বিভিন্ন শিলা ও খনিজ পদার্থকে নিয়ে প্রকৃতি বা প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি। এদের মধ্যে যে বস্তুকে মানুষ এখনও ব্যবহার করতে শেখেনি তাকে নিরপেক্ষ সামগ্রী বলে। বিপরীত ভাবে মানুষ তার সংস্কৃতির সাহায্যে অর্থাৎ জ্ঞান, বুদ্ধি, উদ্যোগ ও কারিগরি কলাকৌশলের সাহায্যে প্রকৃতির যে উপাদানকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে শিখেছে তাই হল সম্পদ।

মানুষ (Man) : মানুষ সম্পদের সৃষ্টিকর্তা। আপন প্রয়োজনেই মানুষ সম্পদ সৃষ্টি করে। অর্থাৎ মানুষ সম্পদের ভোগকর্তাও। মানুষ নিজ শ্রমশক্তির সাহায্যে সম্পদ সৃষ্টি করে। ফসল উৎপাদনের জন্যে জমি কর্ষণ করতে, খনিগহ্বর থেকে খনিজ তুলতে মানুষের শ্রম সবার আগে প্রয়োজন। শক্তি ও কায়িক শ্রম (Energy and manual labour) এর উৎস রূপেই মানুষ সম্পদ। সুতরাং জনবসতির ঘনত্ব, জনসংখ্যার স্বাস্থ্য, কর্মমুখিতা, শক্তি ও শ্রমের যোগান দেয়। মানব সম্পদের বৈশিষ্ট্য—

(i) জনসংখ্যার ঘনত্বের তারতম্যে শ্রমের যোগান বাড়ে, কমে (উদাহরণ—ভারতে শ্রমের যোগান বেশি, অস্ট্রেলিয়ায় কম)।

(ii) জনসংখ্যার স্বাস্থ্যের তারতম্যে শক্তির যোগান কমবেশি হয় (উদাহরণ—জনপ্রতি শক্তির যোগান তৃতীয় বিশ্বে রুম স্বাস্থ্যের ভিড়ে যথেষ্ট কম। কিন্তু উন্নত দেশে বেশি।

(iii) প্রকৃতি থেকে সম্পদ সৃষ্টির জন্যে মানুষের হস্তক্ষেপ আবশ্যক।

(iv) মানুষের চাহিদাই সম্পদ সৃষ্টির মূল। জনসংখ্যা যত বেশি হবে, সম্পদের চাহিদা এবং সৃষ্টির তাগিদ তত বেশি হবে।

(v) মানুষের শ্রমশক্তি ও চাহিদা সম্পদের স্থানান্তর ঘটায়। যেমন—কঙ্গো ও আমাজন অববাহিকার বন্য রবার অনুরূপ জলবায়ুর জন্যে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ সফল হয়েছে।

(vi) তবে উন্নততর সম্পদ সৃষ্টির জন্যে প্রকৃতির উপকরণ এবং মানুষের শ্রমশক্তিই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন হয় সংস্কৃতির।

সংস্কৃতি (Culture) : সম্পদ সৃষ্টির কাজে মানুষ তার দৈহিক শক্তি দিয়ে যেমন সহযোগিতা করছে তেমনি মানবশক্তি দিয়ে সহায়তা করছে। কাজ করতে গিয়ে দেখা গেছে নিজ হাতে করার থেকে কোন যন্ত্ৰ নিয়ে কাজ করলে বেশি কাজ করা যায়। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। পরস্পর হানাহানি না করে সংঘবদ্ধ হয়ে বাস করলে কিছু অধিকার ত্যাগ করে কতকগুলি নিয়মনীতি তৈরী করে নিলে, অভাব মেটানো অনেক সহজ হয়ে আসে। এই চিন্তা থেকেই গড়ে উঠল নিত্য নতুন সমাজব্যবস্থা। এই সব বুদ্ধিবৃত্তি, যন্ত্র, কর্মপদ্ধতি, নিয়মনীতি সমাজ ব্যবস্থাই সংস্কৃতি নামে পরিচিত। শিক্ষা-দীক্ষা, বুদ্ধি, স্বাস্থ্য, সভ্য ভদ্র আচরণ, সুশৃঙ্খল জীবনযাত্রা সম্পদের অবস্তুগত (non-material) উপাদান।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সম্পদ, প্রকৃতি, মানুষ এবং সংস্কৃতির যৌথ প্রক্রিয়ার স্বর্ণ ফসল। এককভাবে কোন উপাদান দ্বারা সম্পদ সৃষ্টি সম্ভব নয়। সম্পদ পরিণতিলাভ (Resourceship) প্রকৃতি, মানুষ এবং সংস্কৃতির যৌথ প্রক্রিয়ার অবদান। সম্পদের কার্যকারিতাতত্ত্ব আলোচনাকালে এই তথ্য প্রমাণিত হবে। তবে প্রকৃতি ও মানুষ হল মৌলিক উপাদান। সংস্কৃতি সহায়ক উপাদান।

References

সম্পদ অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, তারকসূদন ঘোষ 1994

অর্থনৈতিক সম্পদ সমীক্ষা, তরুণকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় 1994

সম্পদ ভূগোল, অজিতকুমার শীল 2006

অর্থনৈতিক ভূগোল ও সম্পদ শাস্ত্রের পরিচয়, অনীশ চট্টোপাধ্যায়  2000

Study Material Elective Geo EGO : 06,  Jyotirmoy Sen 2000

The Geography of Economic Activity, Thoman, Richard S.et.al 1968

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *