‘মা’ !
এই একটি শব্দেই আমি চোখ মেলে বিশ্বকে প্রথম চিনেছিলাম ।
‘মা’!
বাংলা ভাষার যত মমতা, যতখানি নিশ্চিন্ত শান্তিময় আশ্রয় – আমার ওই প্রথম উচ্চারিত শব্দটিতে। বাংলা ভাষাও তাই আমার মায়ের মতো, আমার ভালোবাসা, খুনসুটি, অনুযোগ, অভিমান আর আবদারের কেন্দ্রভূমি এই ভাষা !
বাংলা! একটি ছোট্ট শব্দ। এই শব্দটি আছে বলেই ‘ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরির খেলা’, এই শব্দটি আছে বলেই ‘জলভেজা কেতকীর দূর সুবাসে’ মন উন্মনা। বাংলা ভাষা আছে বলেই ‘চিলের সেনালী ডানা হয়েছে খয়েরী’ আর ‘ডানায় রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল । বাংলা আছে বলেই হেমন্তের বিষণ্ণ সন্ধ্যায় জীবনানন্দের স্বপ্নমেদুর চোখে ধরা পড়ে :-
“চারিদিকে শান্ত বাতি – ভিজে গন্ধ – মৃদু কলরব
খেয়া নৌকোগুলো এসেছে লেগেছে চরের খুব কাছে,
পৃথিবীর এইসব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল –
এশিরিয়া ধুলো আজ – বেবিলন ছাই হয়ে আছে।”
একটি ভাষার কি অসীম ব্যাপ্তি!!
বাংলা ভাষা ছিল বলেই শ্রাবণ সন্ধ্যায় বিজন ঘরের কোণে প্রদীপখানি কেউ জ্বেলে দিয়ে যায়। ‘মৌনী মাটির মর্মের গান’ মর্মর রবে ধ্বনিত হয়ে ওঠে। এই ভাষার যাদুকরী শক্তির বলেই কনকচাঁপার বনে রবির শেষ রশ্মিপাতে তুমি আমায় ছুটির নিমন্ত্রণে ডেকে নিয়ে যাও। আমার লালপেড়ে শাড়ি পরা বাংলা মা ছিলো বলেই শালের বনে খ্যাপা হাওয়ার’ এমন মাতলামি আর ‘বনলক্ষ্মীর কম্পিত কায় চঞ্চল অন্তর, ঝঙ্কৃত তার ঝিল্লির মঞ্জীর।’
রবীন্দ্রনাথ এই মায়ের আঁচল ধরেই বিশ্বের দরবার থেকে ছিনিয়ে এনেছেন নোবেল। বিদেশ বিভুই ঘুরে বাংলা মায়ের কাছেই ফিরে এসে এক কবি বলেছেন-
“হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন
তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি
পরধনলোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।”
এই বাংলা মা, যার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি শাসকদলের গুলিতে প্রাণ উৎসর্গ করে শহীদ হয়েছেন বাংলা মায়ের দামাল ছেলের দল – সালাম, বরকত, জাব্বার, রফিকেরা। যাদের জন্য বাংলাতেই রচিত হয়েছে সেই কালজয়ী গান –
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি ?”
প্রতিবছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি এলে ওদের জন্য আমরা খুলে দিহ হৃদয়ের সব কটি জানালা। শুধু আমরা, বাংলা ভাষাভাষীরা নই, গোটা পৃথিবীর মানুষ আজ এই তারিখকে গৌরবান্বিত করেছে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে মেনে নিয়ে।
মানবচেতনার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বৃত্তিগুলিকে প্রকাশের পথ ক’রে দিয়েছে এই ভাষা । এই ভাষাতেই উচ্চারিত হয়েছে। বিপ্লবের বাণী, সংগ্রামের মন্ত্র –
“আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই,
স্বজন হারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবই।”
আবার, এই মায়ের মুখেই ধ্বনিত হয়েছে শান্তির স্তোত্র – প্রার্থনার প্রণতি –
“তুমি নির্মল করো মঙ্গল করে, মলিন মর্ম মুছায়ে”
আমার ভাষার কোন ছুঁৎমার্গ নেই। গঙ্গোত্রী থেকে উৎসারিত হয়ে গঙ্গা যেমন বহু উপনদী – শাখানদীতে সমৃদ্ধ হয়ে সাগর অভিমুখে বয়ে চলে, বাংলা ভাষাও তেমনি সংস্কৃত থেকে তৎসম, তদ্ভব, অর্ধতৎসমের পথ ধরে তার শব্দ ভাণ্ডারে বহুবিধ শব্দ গ্রহণ করেছে। ভারতীয় প্রাদেশিক ভাষা থেকেও অকাতরে শব্দগ্রহণ করেছে বাংলা। শুধু তাই নয়, আরবী, ফারসী, পর্তুগীজ, চীনা, বর্মী, ওলন্দাজ, স্পেনীয়, ফরাসী, ইটালীয় – বিশ্বের প্রায় সমস্ত সমৃদ্ধ ভাষা থেকেই অল্পবিস্তর শব্দ সংগ্রহ করে বাংলা তার শব্দভাণ্ডারের ডালি সাজিয়েছে।
বাংলা ভাষায় কতো না বহু বিচিত্র শব্দ। সংস্কৃতের সাজগোজ পরেই যারা আড়াই হাজার বছরের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাংলা ভাষায় ঢুকে পড়েছে তারা তৎসম শব্দ। যেমন – চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, হরিনী, ব্যাঘ্র, হস্তী, ইত্যাদি। এদের মধ্যে যারা আবার বাংলায় ঢোকার পর তাদের পোষাক কিঞ্চিৎ বদলে নিয়েছে, তারা হল অর্ধ তৎসম। যেমন – নিমন্ত্রণ থেকে নেমন্তন্ন, রৌদ্র থেকে রোদ্দুর, রাত্রি থেকে রাত্তির, গৃহিনী থেকে, গিন্নী, প্রণাম থেকে পেন্নাম, মন্ত্র থেকে মন্তর। আরেকদল শব্দ আছে, যারা সংস্কৃত থেকে প্রাকৃতের মধ্য দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে ভেঙে-চুরে অনেকটা নতুন চেহারায় ১০০০ খ্রীষ্টাব্দে বাংলার মাটিতে ঢোকার পাসপোর্ট পায়। যেমন – মৃত্তিকা থেকে মাট্টিয়া থেকে মাটি, ইন্দ্রাগার থেকে ইন্দাআর হয়ে ইন্দারা, একাদশ থেকে এগারহ হয়ে এগার, শোভাঞ্জন থেকে শো আঞ্জন হয়ে সজনে। এই তিন ধরণের শব্দ ছাড়াও বাংলাতে আছে আরো বিচিত্রধর্মী শব্দ ।
যুগে যুগে এই বাংলার মাটিতে এসেছে বিদেশী ঔপনিবেশিক, বণিক ও পর্যটকের দল। তারা বিভিন্ন সময়ে বাংলার মাটিতে পা রেখেছে আর আমাদের ভাষায় রেখে গেছে তাদের শব্দের স্বাক্ষর। আজও আমরা সেই শব্দগুলিকে খাঁটি বাংলা শব্দ বলেই ব্যবহার করে চলেছি। যেমন রাষ্ট্রভাষা হিন্দী থেকে বাংলায় এসেছে- লাগাতার, পয়লা, দোসরা, দোস্ত, বন্ধু প্রভৃতি অজস্র শব্দ। ‘বন্ধু’ হিন্দী দিলেও ‘হরতাল’ দিয়েছে গুজরাটি ভাষা। ‘চাহিদা’ শব্দটির মধ্যে যতই বাঙালিয়ানা থাক, সেটি আসলে পাঞ্জাবী শব্দ। আর্যরা ভারতে আসার আগে এখানে যে অষ্ট্রিক গোষ্ঠী ছিল, তাদের কিছু
শব্দ আর্য বংশোদ্ভুত বাংলা ভাষার ঝুলিতে রয়ে গেছে। যেমন – ঝাঁটা, ঝিঙা, ঝোল, ঢোল, উচ্ছে, কিম্বা মুড়ি। দক্ষিণী দ্রাবিড়ীয় ভাষার স্বাদ আমরা পাই ইডলি – ধোসার মধ্যে।
মুঘল শাসনকালে বাংলা ভাষাতে প্রচুর পরিমাণে আরবী ফারসী শব্দ ঢুকে পড়েছে। যেমন আইন, আদালত, তারিখ, মুহুরী, সরকার, দরখাস্ত, বীমা, জামা, মোজা, আমীর, ওমরাহ।
তুর্কী নাচন নাচতে নাচতে বাংলা শব্দভাণ্ডারে ঢুকে পড়েছে তুর্কী শব্দ বেগম – বিবিরা, ‘চাপকান’ প’রে ‘উজবুক’ ‘কুলি’ রা, ঠিক তেমনি হাড় – হিম করা শব্দও তারা ঠেসে দিয়েছে বাংলায়, যেমন – কাঁচি, চাকু, তাতেও হল না যখন, তখন এনেছে বারুদ, তারপর অনিবার্যভাবে এসেছে ‘লাশ’ আর তারপরেই ‘দারোগা’র আবির্ভাব। সেদিক থেকে ওলন্দাজরা নিরাপদ। হরতন, রুইতন, ইস্কাবন আর চিড়েতন – চাররকম তাস তারা দিয়ে গেছে আমাদের অলস বাঙালীর বৈঠকী আড্ডার জন্য । পর্তুগীজ নাবিকেরা দিয়ে গেছে আনারস, পেয়ারা, পেঁপে। সেই সঙ্গে ‘আলকাতরা’। অবশ্য হাত ধোয়ার জন্য গামলা, বালতি, বোতল আর সাবানও তাদের দেওয়া। এরপর যদি কোঁচকানো জামা প্যান্ট ‘ইস্তিরি’ করতে হয়, তাহলে তাদের কাছেই হাত পাততে হবে। ফরাসীদের দেওয়া রেস্তেরাঁ বা কাফে না থাকলে আমাদের বৈকালিক আড্ডাটাই জমত না। রেস্তেরাঁ-র মেনু-টাও ফরাসীদের। অবশ্য চীনারা যদি চা, চিনি আর গরম গরম ফুলকো ‘লুচি’ না দিয়ে যেত তাহলে সকাল বেলাটাই মাটি হয়ে যেত আমাদের। তবে চায়ের সঙ্গে ‘বিস্কুট’টা কিন্তু ফরাসীদের দেওয়া। সুদূর বর্মা মুলুক থেকে একটি মুখরোচক খাদ্য ও একটি পরিধেয় আমাদের বাংলাতে বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। শব্দ দুটি হল ঘুগনি ও লুঙি । শুধু এটুকু নয়, বাংলাকে জাপানীরা দিয়েছে রিকশা, হাসনুহানা ফুল, রাশিয়া দিয়েছে ভদকা, স্পুটনিক, জার্মানী, দিয়েছে কিণ্ডারগার্টেন, অস্ট্রেলিয়া দিয়েছে ক্যাঙারু, মালয় দিয়েছে কাকাতুয়া। এ যেন অসুর নিধনের জন্য মা দুর্গাকে দেবতাদের অস্ত্রদান ৷
আর যার কথা এখনো উল্লেখই করা হল না, সেই ইংরেজি তো মিশে আছে বাঙালী ও বাংলা ভাষার অস্থিমজ্জাতে । প্রতি বাক্যে দু’একটা ইংরেজি শব্দ না থাকলে যেমন বাঙালির মান থাকে না, তেমনি দু’ চারটে ইংরেজি শব্দের রড না ঢোকালে যেন বাংলা ভাষার ল্যাকপেকে মেরুদণ্ডটাই সোজা হয় না। চেয়ার, বেঞ্চ, গ্লাস, ব্যাট, বল, স্কুল, কলেজ, ক্রিকেট, টেনিস তো কবেই যেন ধর্মান্তরিত হয়ে বাংলা হয়ে গেছে, তাছাড়াও প্রতিদিন অসংখ্য শব্দ বাংলার সঙ্গে মিতালী পাতিয়ে ঢুকে পড়ছে বাংলার অন্দরমহলে । কেউ কেউ বাংলা শব্দের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে। যেমন হেড পণ্ডিতের হেড ইংরেজি, পণ্ডিত বাংলা ।
বাংলা ভাষার শিরা উপশিরায় ইংরেজি রক্ত এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে একে প্রতিহত করার কোন চেষ্টা আমরা করি না। করলে তার চেহারাটা হত এইরকম – ‘নো, নো, বাংলা ভাষায় ইংলিশ ওয়ার্ড একদম ইউজ করবে না।’ অবশ্য ইংরেজি শব্দ বাংলার মাটিতে এমনভাবে দখলদারি জারি করেছে যে আজ বাংলা ভাষার পণ্ডিতদের নূতন করে ভাবতে হচ্ছে – শব্দগুলিকে উচ্ছেদ না করেও তার বাংলা পরিভাষা কীভাবে তৈরি করা যায়, যাতে অন্ততঃ বলা যায় দ্যাখো, বাংলার শব্দভাণ্ডার হতদরিদ্র নয় । যেমন Archives থেকে করা হয়েছে লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা, casual থেকে নৈমিত্তিক, Censor Board থেকে বিবাচন পর্ষদ, Pensioner থেকে উত্তর বেতনভোগী, Receptionist থেকে আপ্যায়ক, Sponsor থেকে পোষক, Coalition Government থেকে মিলিজুলি সরকার, Ad-hoc-Com-mittee থেকে তদর্থক সমিতি, Monogram থেকে অভিজ্ঞান, Ordinance থেকে অধ্যাদেশ প্রভৃতি কতো না শব্দ ৷
শুধু ইংরেজি থেকেই নয়, বাংলা শব্দের নিজস্ব অন্দরমহলেও রাতদিন ভাঙাগড়া চলছে। মনের ভাবকে আরো বেশি নির্দিষ্টতর ক’রে পৌঁছে দিতে শব্দ নিয়ে এই খেলার যেন শেষ নেই। অনিকেত, অতিরেক এইধরণের ভাঙাগড়ার ফসল । তাছাড়া বিশ্বায়ন, ভূবনায়ন, দুর্বৃত্তায়ন, ফিল্মায়িত এগুলোও এ যুগের সৃষ্টি।
কেবল-ইন্টারনেটের মাধ্যমে তৃতীয় প্রজন্মের মুখে মুখে এখন ঢুকে পড়ছে নিত্যনতুন অচেনা শব্দ বা চেনা শব্দেরই নতুন ব্যঞ্জনা। কোন্ পুকুরের বেনোজল কোন্ চোরাপথে কার পুকুরে মিশে যাচ্ছে, তার হিসেব নেই। ধামাকা, হাঙ্গামা, প্রভৃতি শব্দও কখন বাংলায় ঢুকে পড়েছে কে জানে। যেমন ‘ছেলেবেলা’র আদলে ‘মেয়েবেলা’র ব্যবহার ঘটিয়ে দিয়েছেন একজন বিতর্কিত লেখিকা। রকে বসে আড্ডা দেওয়া বখে যাওয়া বেকার ছেলেদের একটি নতুন শব্দভাণ্ডার ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে। যেমন – গ্যাজানো, হাওয়া হয়ে যাওয়া, ফুটে যাওয়া, তেল দেওয়া, গ্যাস দেওয়া, মুরগী করা, ফান্টা, ঢপ দেওয়া, হাপিস করা, হ্যাবক, বাম্পার ইত্যাদি। এই প্রজন্মের কাছাকাছি গিয়ে আড়ি পাতলে টুকরো টুকরো বাক্য ভেসে আসবে – গোপাল আমাকে সমানে ঝারি মারছিল, এসব ফাণ্ডা আমার নেই রে ভাই, তোর নতুন জিন্টা ফাটাফাটি হয়েছে, কাল তোকে হেভি লাগছিল। ঝারি মারা, ফাণ্ডা, ফাটাফাটি, হেভি – এইধরণের শব্দগুলি একেবারে এই প্রজন্মের প্রেডাকশন । প্রচলিত চিরাচরিত শব্দগুলি বহুব্যবহারে ক্লিশে হয়ে যাওয়ায়, এই জেটগতির যুগ নিজের প্রয়োজনেই বানিয়ে নিয়েছে দুরন্ত ধারালো নতুন অভিধান ৷
এইভাবেই আমার বাংলা হয়ে উঠেছে বহুমাত্রিক। শাশ্বত চেতনার দিগন্ত ছুঁয়ে আজ তার অবারিত আলোকিত বিস্তার। সে যেমন সজল মেঘের মতো কোমল, রামধনূর মতো বর্ণময়, সুদূর রাতের পাখীর মতো অধরা, ঠিক তেমনি একবিংশের স্মার্ট কিশোরের মতো ‘ফাটাফাটি’।
বাংলা ভাষা আমার তুলসীতলার সন্ধ্যাপ্রদীপ,
বাংলা ভাষা আমার ভোরের আজানধ্বনি,
বাংলাভাষা শরতের সোনারোদ, গোধুলির ঘরে ফেরা পাখি ।
বাংলা ভাষা আমার অন্ধকারের গায়ে জোনাকির আলো,
মধ্যরাতে অগণিত নক্ষত্রের মৌনমুখর বাণীমঞ্জরী !
বাংলা ভাষা আমার অবদমিত বুকের মাঝে বোবা কান্না,
বাংলা ভাষা আমার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস, আমার প্রাণবায়ু ।।