জীব থেকে উৎপন্ন অসংঘাত শিলাকে চারটি উপশ্রেণীতে ভাগ করা যায়, সেগুলো নিচে আলোচনা করা হল :
চুনময় (Calcareous) : সমুদ্রের যে অংশে সংঘাত পলি পৌঁছয় না বা অল্প পৌঁছয়, সেখানে প্রবাল, ঝিনুক, শামুক, শাঁখ প্রভৃতি নানা ছোট-বড় সামুদ্রিক প্রাণী বাস করে । এদের কঙ্কাল ও দেহাবরণ চুন দিয়ে গঠিত । এদের মৃত্যু হলে এই সমস্ত অদ্রাব্য চুন জাতীয় পদার্থ সমুদ্রবক্ষে সঞ্চিত হয় । এটাই শিলীভূত হয়ে চুনাপাথরের সৃষ্টি করে । এরকম চুন অধঃক্ষেপে জীবের দেহের ভগ্নাংশ বর্তমান থাকতে পারে । তার থেকে ফসিলযুক্ত চুনাপাথর সৃষ্টি হয় । অনেক সময় চুন ছাড়া অন্য কণাকে (যেমন বালি) কেন্দ্র করে চক্রাকারে চুনের সঞ্চয় ঘটে এবং গোল বা ডিম্বাকৃতি পদার্থের সৃষ্টি হয় । এরকম পদার্থ গঠিত চুনাপাথরকে উওলিটিক চুনাপাথর বা উওলাইট (Oolite) বলে ।
খনিজ ক্যালসিয়াম বা ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেটকে ডলোমাইট (Dolomite) বলে। কার্বনেট পাথরের অর্ধেকের বেশি ডলোমাইট খনিজ দিয়ে তৈরি হলে সেই পাথরকে ডলোমাইট বা ডলোস্টোন বলে । সরাসরি রাসায়নিক অধঃক্ষেপণের ফলে ডলোমাইট সৃষ্টি হতে পারে । তবে অধিকাংশ ডলোমাইটে ম্যাগনেসিয়াম আয়ন ক্যালসিয়াম আয়নকে প্রতিস্থাপিত করে কেলাস গঠনে অন্তর্গত হয় । নিম্ন সঞ্চরমান জলের সঙ্গে পরিবাহিত Mg আয়ন এই প্রতিস্থাপনে সাহায্য করে । সম্ভবত চুনাপাথর গভীর স্থানে নিমজ্জিত হলে সঞ্চরমান উষ্ণ জলের Mg আয়ন Ca আয়নকে প্রতিস্থাপত করে ডলোমাইটের সৃষ্টি করে । তবে এ বিষয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে ।
অঙ্গারময় (Carbonaceous) : বিভিন্ন প্রকার কয়লা ও পিট এই ধরনের শিলার অন্তর্গত । সামুদ্রিক সংঘাত শিলার সঙ্গে এগুলো অন্তঃস্তর গঠন করে । মিঠে জলের জলাভূমিতে যে ঘন ঝোপ জাতীয় উদ্ভিদ জন্মে তার থেকে কয়লা (Coal) বা পীট (Peat) সৃষ্টি হয় । এই সমস্ত উদ্ভিদের পরিত্যক্ত অংশ জলের তলায় জমা হয় বলে অক্সিজেনের অভাবে উদ্ভিজ্জ পদার্থ আংশিকভাবে জারিত হয় ও বিয়োজনও কম হয় । ফলে জৈব পদার্থের সঞ্চয় বাড়তে পারে । অনেক সময় ঐ জৈব পদার্থ পরিবাহিত ও স্থানান্তরিত হয়ে অন্যত্রও জমা হতে পারে । পরবর্তীকালে ভূমির ক্রমনিমজ্জনের সময় এদের ওপর সংঘাত পলির সঞ্চয় ঘটে । ওপরের পলির চাপে ও উচ্চতর তাপাঙ্কে ঐ জৈব পদার্থ পিট বা কয়লায় পরিবর্তিত হয় । কয়লা উৎপত্তির প্রাথমিক অবস্থায় উদ্ভিজ্জ পদার্থ অল্প পরিবর্তিত হয়ে যে শিলা তৈরি করে তাকে পিট বলে । উদ্ভিজ্জের প্রকৃতি, পরিবর্তনের সময়কাল, ভূ-আন্দোলনের প্রকৃতি ও তীব্রতার উপর নির্ভর করে অ্যানথ্রাসাইট, বিটুমিনাস ও লিগনাইট জাতীয় কয়লার সৃষ্টি হয় ।
বালুকাময় (Siliceous) শিলা : সমুদ্রে ডায়াটম, ইউফিউসোরিয়া, প্রভৃতি এককোষী উদ্ভিদ বালুকা জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি হয় । এর থেকে ডায়াটোমেসাস্ কর্দম, ইনফিউসোরিয়াল কর্দম নামে বালুকাময় শিলার সৃষ্টি হয় । অবশ্য এরকম পাথর খুবই বিরল ।
ফসফোরাইট (Phosphorite) : সামুদ্রিক মেরুদণ্ডী প্রাণীর কঙ্কাল বা হাড় ক্যালসিয়াম ফসফেট দিয়ে তৈরি হয় । এই সমস্ত অদ্রাব্য দেহাবশেষ সঞ্চিত পদার্থ উৎক্রান্ত রূপান্তরিত (incipient metamorphism) হয়ে ফসফোরাইট শিলার সৃষ্টি হয় । সামুদ্রিক পাখির বিষ্ঠার সঞ্চয় (গুয়ানো- Guano) থেকেও ফসফোরাইট শিলার সৃষ্টি হতে পারে । ভারতবর্ষের রাজস্থানে ও তামিলনাড়ুতে পাললিক ফসফেট পাথরের সঞ্চয় হয়েছে ।
Source: Study Material Elective Geo EGO : 09, Dr Mukhopadhyay Subhash