আয়তনের ভিত্তিতেও বসতিকে শ্রেণীবিভাগ করা যায়। এক্ষেত্রে যেমন দু’চারটে ঘর নিয়ে গড়ে ওঠা সড়কপথের ধারে অবস্থিত চটি রয়েছে, তেমনি আবার কলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই-এর, মতো মহানগর রয়েছে। নীচে এই ধরনের বিভিন্ন বসতির একটা চিত্র তুলে ধরা হল। .
সড়ক বসতি | Roadside settlement :
এ ধরনের বসতিগুলো সাধারণতঃ রাস্তার ধারে গড়ে ওঠে। প্রদান বসতি থেকে প্রায় বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থিত এই বসতিগুলোর বাসিন্দারা বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত থাকতে পারে। পুরোপুরি গ্রাম্য পরিবেশে দু চারটে ঘর নিয়ে গড়ে ওঠা এই ধরনের বসতিগুলোর অধিবাসীরা কৃষিকাজে নিয়োজিত থাকতে পারে বা দুই শহরের মধ্যবর্তী স্থানে গড়ে ওঠা এই ধরনের বসতি অনেক সময় বাস বা ললীর চালকদের মোটেল হিসেবে কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে এই ধরনের বসতির সাথে পেট্রোলপাম্প যুক্ত থাকে। সাধারণতঃ ঘর- বাড়ির একটি অংশে মালিক থাকে, অপর অংশ ব্যবসার কাজে লাগানো হয়। বর্তমান লেখক লক্ষ্য করেছে। যে পুরোপুরি গ্রাম্য পরিবেশে গড়ে ওঠা বসতিগুলোর বাসিন্দারা অনেক ক্ষেত্রে রাস্তার ধারে সরকারী খাস জমির আস্তানা বেঁধেছে।
ক্ষুদ্রগ্রাম | Hamlet :
আমাদের দেশে এই ধরনের বসতি অনেক সময় প্রধান গ্রামের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রধান বসতি থেকে একটু দূরে গড়ে ওঠা এ ধরনের বসতিগুলো ‘টোল’, ‘টুলী’, ‘ছোট’ ইত্যাদি নামে পরিচিত। প্রধান বসতির নামের শেষে ‘টোল’, ‘টুলী’, বা নামের আগে ‘ছোট’ শব্দ যুক্ত ঐ বসতিগুলো যে প্রধান বসতিরই অংশ তা বোঝা যায়। অনেক সময় গ্রামের শেষ প্রান্তে অবস্থিত এবং প্রধান গ্রাম থেকে সামান্য দূরত্বে গড়ে ওঠা এ ধরনের ক্ষুদ্র গ্রামগুলোতে সাধারণতঃ সমাজের তথাকথিত ‘অস্পৃশ্য’ শ্রেণীর লোকেরা বাস করে। বিহারের ছোটনাগপুর মালভূমিতে বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে ওঠা বসতিগুলোর নামের শেষে টোলা বা টুলী শব্দ যুক্ত থাকে।
ক্ষুদ্রগ্রামে 4/5টি বাড়ি উদাহরণস্বরূপ বলা যায় জলপাইগুড়ি জেলার টাডী বা জোত অর্থাৎ ক্ষুদ্র কৃষিগ্রাম থেকে 20/25 টি বাড়ির সমাবেশ দেখা যায়। এসব বসতিতে ক্ষেত্র বিশেষে 2/1টি মুদীখানাও থাকে। আশপাশের গ্রাম যদি একটু দূরে থাকে, তবে এ ধরনের বসতিতে ইদ্গা, মসজিদ বা দুর্গামণ্ডপও দেখা যায়।
গ্রাম | Village :
ক্ষুদ্রগ্রাম অপেক্ষা আয়তন ও জনসংখ্যার দিক দিয়ে গ্রাম অনেক বড়। একটি গ্রামের মধ্যে অনেকগুলো ক্ষুদ্রগ্রাম বা পাড়া থাকতে পারে। গ্রামে জনসংখ্যা 150 হতে পারে আবার 10,000-ও হতে পারে উদাহরণস্বরূপ বলা যায় দক্ষিণ ভারতের গ্রামগুলো। আমাদের দেশে গ্রামের জনসংখ্যা নির্দিষ্ট করে বেঁধে দেওয়া নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের লোকগণনা কর্তৃপক্ষ গ্রাম বলতে 150 থেকে 1,000 লোকের আবাসকে বুঝিয়েছে। উন্নত দেশের গ্রামগুলোতে সব রকম সুযোগ সুবিধে মেলে। যেমন কৃষি যন্ত্রপাতির দোকান, গাড়ি মেরামতী কারখানা, ওষুধের দোকান, পশুখাবারের দোকান ইত্যাদি । আমাদের দেশে গ্রাম বলতে কৃষি এলাকাকে বোঝান হয়ে থাকে। তবে পাশ্চাত্য দেশের মত এখানেও জনঘনত্ব কম। আমাদের দেশের গ্রামগুলো কৃষি নির্ভর হলেও অন্যান্য বৃত্তির লোকজনও এখানে কম বাস করে না। তবে ইদানীং লোকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে গ্রামবাসীকে বৃত্তির তাগিদে রোজ শহরে যাতায়াত করতে দেখা যায় (Sen, 1986, 1995)। আমাদের দেশের গ্রামগুলোতে জীবনযাপনের সুযোগ সুবিধে খুব কম মেলে বলে গ্রামবাসীকে শহরাভিমুখী হতে হয়। তবে উত্তর ভারতের চেয়ে দক্ষিণ ভারতের গ্রামগুলো অনেকাংশে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
শহর | Town :
গ্রাম অপেক্ষা শহর আয়তন, জনসংখ্যা ও বৃত্তির দিক দিয়ে অনেক বড়। শহরের সংজ্ঞা এক এক দেশে এক এক রকম। যেমন ডেনমার্কে 250 জনসংখ্যা অধ্যুষিত বসতিকে শহর বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে 2,500 লোকের বাসস্থানকে শহর বলে। আর ভারতে কোন স্থান শহর হতে গেলে নূন্যতম 5,000 জনসংখ্যা বাসভূমি হতে হবে। এছাড়া সে স্থানের শতকরা 75 ভাগ লোক অ-কৃষিজীবী হবে। এখানকার জনসংখ্যা ঘনত্ব প্রতি বর্গ কি.মি.-তে 400 জন হতে হবে। শহর হল অ-কৃষি এলাকা। এখানে বহুবিধ বৃত্তির সমাবেশ দেখা যায়।
মহানগর | Metropolis :
গ্রীম শব্দ Metropolis-র মানে হল মূল নগরী বা “Mother city”। সাধারণতঃ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই সব নগরীর জনসংখ্যা নূন্যতম পক্ষে 10 লক্ষ হত। অনেক ক্ষেত্রে এটি আবার আঞ্চলিক রাজধানী হিসেবেও গণ্য হত। বর্তমান দিনে অবশ্য আশপাশের শহরগুলোর তুলনায় কয়েকগুণ বড় এইসব মহানগরের কর্মধারা বহুদূরব্যাপী বিস্তৃত হয়, সময় সময় তা দেশের গণ্ডী ছাড়িয়ে যায়। বহুসংখ্যাক বিদেশীর উপস্থিতি এই সব মহানগরকে এক বিশিষ্ট স্থানে প্রতিষ্ঠা করে। এই সব মহানগরী সৃষ্টির মূলে রয়েছে তার বহুবিধ কর্মধারা আর তা সম্ভবপর হয় উন্নত পরিবহণের মাধ্যমে। মহানগর সম্বন্ধে বিশদভাবে পরে আলোচনা করা হয়েছে।
Source: Study Material Elective Geo EGO : 09, Dr Mitra Somnath, Dr Sen Jyotirmoy 2008