তোমরা যেখানে সাধ – জীবনানন্দ দাশ

তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও –আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাব; দেখিব কাঁঠালপাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে; দেখিব খয়েরি ডানা শালিখের সন্ধ্যায় হিম হয়ে আসে ধবল রোমের নিচে তাহার হলুদ ঠ্যাং ঘাসে অন্ধকারে নেচে চলে—একবার—দুইবার—তারপর হঠাৎ তাহারে বনের হিজল গাছ ডাক দিয়ে যায় হৃদয়ের পাশে; দেখিব মেয়েলি হাত সকরুণ—সাদা শাঁখা ধূসর বাতাসে শঙ্খের মতো কাঁদে : […]

Continue Reading

নন্দলাল – দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ— স্বদেশের তরে যা ক’রেই হোক, রাখিবেই সে জীবন। সকলে বলিল, ‘আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল ?” নন্দ বলিল ‘বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল? আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?” তখন সকলে বলিল—বাহবা বাহবা বাহবা বেশ! নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তাহারে কেবা! সকলে বলিল […]

Continue Reading

সকল দেশের সেরা – দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

ধনধান্যে পুষ্পেভরা আমাদের এই বসুন্ধরা তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা; ও সে, স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ, স্মৃতি দিয়ে ঘেরা; এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি। চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা, কোথায় উজল এমন ধারা। কোথায় এমন খেলে তড়িৎ এমন কালো মেঘে। তারা পাখির […]

Continue Reading

বিলেত ফের্তা – দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

আমরা বিলাতফের্তা ক-ভাই, আমরা সাহেব সেজেছি সবাই; তাই কী করি নাচার, স্বদেশি আচার করিয়াছি সব জবাই। আমরা বাংলা গিয়েছি ভুলে, আমরা শিখেছি বিলিতি বুলি, আমরা চাকরকে ডাকি ‘বেয়ারা’–আর মুটেদের ডাকি ‘কুলি’। আমরা সাহেব সঙ্গে পটি, আমরা মিস্টার নামে রটি, যদি ‘সাহেব’ না বলে ‘বাবু’কেহ বলে মনে মনে ভারি চটি। আমরা বিলিতি ধরনে হাসি, আমরা ফরাশি […]

Continue Reading

বন্দেমাতরম্ – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বন্দে মাতরম্ সুজলাং সুফলাং মলয়জশীতলাং শস্যশ্যামলাং মাতরম্।। শুভ্র-জ্যোৎস্না-পুলকিত-যামিনীম্‌ ফুল্লকুসুমিত—দ্রুমদলশোভিনীম্‌ · সুহাসিনীং সুমধুরভাষিণীম্‌ সুখদাং বরদাং মাতরম্।। সপ্তকোটি কণ্ঠ কলকল নিনাদ করালে, দ্বিসপ্তকোটী ভুজৈধৃতখর-করবালে অবলা কেন মা এত বলে।। বহুবলধারিণীং নমামি তারিণীং রিপুদলবারিণীং মাতরম্।।

Continue Reading

গ্রীষ্মকাল – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

গ্রীষ্মকাল গ্রীষ্মকাল, কাকের মুখে শুকনো ডাল, কালের মুখে নেইকো জল গাছের বুকে নানান ফল। ল্যাজের নীচে বুলবুলির লালের ছবি কার তুলির নীলকণ্ঠের তীব্র স্বর রোদের বুকে হানছে শর। দোয়েল পাখির মিষ্টি সুর করছে সকল দুঃখ দূর পাতার আড়ে পিকের ডাক দিচ্ছে যেন লাগিয়ে তাক।

Continue Reading

বর এসেছে বীরের ছাঁদে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বর এসেছে বীরের ছাঁদে, বিয়ের লগ্ন আটটা- পিতল-আঁটা লাঠি কাঁধে, গালেতে গালপাট্টা । শালির সঙ্গে ক্রমে ক্রমে আলাপ যখন উঠল জমে রায়বেঁশে নাচ নাচের ঝোঁকে মাথায় মারলে গাঁট্টা। শ্বশুর কাঁদে মেয়ের শোকে, বর হেসে কয়—‘ঠাট্টা’।

Continue Reading

ক্ষান্তবুড়ির দিদিশাশুড়ি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ক্ষান্তবুড়ির দিদিশাশুড়ির, পাঁচবোন থাকে কালনায়, শাড়িগুলো তারা উনুনে বিছায়, হাঁড়িগুলো রাখে আলনায় । কোনো দোষ পাছে ধরে নিন্দুকে নিজে থাকে তারা লোহা-সিন্দুকে, টাকাকড়িগুলো হাওয়া খাবে বলে রেখে দেয় খোলা জানলায়, নুন দিয়ে তারা ছাঁচিপান সাজে চুন দেয় তারা ডালনায় ।

Continue Reading

বীরপুরুষ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মনে করো, যেন বিদেশ ঘুরে মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে। তুমি যাচ্ছ পালকিতে, মা, চ’ড়ে দরজা দুটো একটুকু ফাঁক ক’রে, আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার ‘পরে টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে। রাস্তা থেকে ঘোড়ার খুরে খুরে রাঙা ধুলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে। সন্ধে হল, সূর্য নামে পাটে, এলেম যেন জোড়াদীঘির মাঠে। ধূ ধূ করে যে দিক-পানে চাই, কোনখানে […]

Continue Reading