বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি – জীবনানন্দ দাশ

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর, অন্ধকারে জেগে ওঠে ডুমুরের গাছে চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নীচে বসে আছে ভোরের দোয়েল পাখি—চারিদিকে পল্লবের স্তূপ জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশথের করে আছে চুপ। ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে; মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া […]

Continue Reading

এখানে আকাশ নীল – জীবনানন্দ দাশ

এখানে আকাশ নীল—নীলাভ আকাশ জুড়ে সজিনার ফুল ফুটে থাকে হিম সাদা রং তার আশ্বিনের আলোর মতোন; আকন্দ ফুলের কালো ভীমরুল এইখানে করে গুঞ্জরন রৌদ্রের দুপুর ভরে;—বারবার রোদ তার সুচিক্কন চুল কাঁঠাল জামের বুকে নিঙড়ায়; —দহে বিলে চঞ্চল আঙুল বুলায়ে বুলায়ে ফেরে এইখানে জাম লিচু কাঁঠালের বন, ধনপতি, শ্রীমন্তের, বেহুলার, লহনার ছুঁয়েছে চরণ; মেঠো পথে মিশে […]

Continue Reading

পারিব না – কালীপ্রসন্ন ঘোষ

‘পারিব না’ এ কথাটি বলিও না আর, কেন পারিবে না তাহা ভাব একবার। পাঁচজনে পারে যাহা, তুমিও পারিবে তাহা, পার কি না পার কর পরখ তাহার, একবারে না পারিলে দেখ শতবার। পারিব না বলে মুখ করিও না ভার, ও কথাটি মুখে যেন শুনি না তোমার। অলস অবোধ যারা কিছুই পারে না তারা, তোমায় ত দেখিনাকো […]

Continue Reading

দাদার চিঠি – কুসুমকুমারী দাশ

আয়রে মনা, ভুতো, বুলি আয়রে তাড়তাড়ি, দাদার চিঠি এসেছে আজ, শুনাই তোদের পড়ি। কলকাতাতে এসেছি ভাই কালকে সকালবেলা, হেথায় কত গাড়ি, ঘোড়া, কত লোকের মেলা। পথের পাশে সারি সারি দু-কাতারে বাড়ি, দিন-রাত্তির হুসহুস করে ছুটছে রেলের গাড়ি। আমি কি ভাই গেছি ভুলে তোদের মলিন মুখ, মনে পড়লে এখনও যে কেঁপে ওঠে বুক।

Continue Reading

আদর্শ ছেলে – কুসুমকুমারী দাশ

আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে? কথায় না বড়ো হয়ে কাজে বড়ো হবে, মুখে হাসি, বুকে বল, তেজে ভরা মন, ‘মানুষ হইতে হবে’,–এই তার পণ। বিপদ আসিলে কাছে, হও আগুয়ান, নাই কি শরীরে তব রক্ত, মাংস, প্রাণ? হাত, পা সবারি আছে, মিছে কেন ভয়, চেতনা রয়েছে যার, সে কি পড়ে রয়? সে ছেলেকে কে চায় […]

Continue Reading

খুকুমণি – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

এই যে আমাল থোনাল বালা, থ্যাকলা দিল গলে, লাঙ্গা তুলি ছিল হাতে, দেখতে গেল পলে। নিদে হাতে তিপ পলেথি, কলে আঙ্গুল দিয়ে, থোও কাকাল দেয়াত থেকে কালি তুলে নিয়ে। দেক আমাল কেমন কাপল মা দিয়েথে ভাই, ধুলোল উপল বথব নাকো, নোংরা হবে তাই। দিদি দিল লাল ফিতা বেঁধে আমাল তুলে, বাবা খেল এও তুমু কোলেল […]

Continue Reading

কমলা নাপিত – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

একদিন কিনা কমলা নাপিত লাঙল নিয়ে কাঁধে ক্ষেত গেছল চাষ করতে। আর কে লাঙল ফাঁদে। বাঘ এসে বললে তখন, ‘তুই না বেটা চাঁই ? কোথা যাবি কমলা নাপিত, তোরে ধরে খাই।’ নাপিত বললে, ‘ওরে বাঘ! তুই যে ভারী বোকা। ভরবে না পেট এখন খেলে, দেখছিস আমি রোগা। ধান হলে ভাত খেয়ে হব মোটা তাজা; তখন […]

Continue Reading

চাঁদের বিপদ – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

চাঁদটাকে ভাই দেখেছিলুম থালার মতো গোল, এই যে দুদিন আগে; আজকে যেন আমার চোখে কেমনতর ঠেকে, নতুনতর লাগে। খানিকটা তার খসে গেছে, ওরে ও ভাই কেমন করে নাইক তা ত জানা চাঁদের বুড়ি অসাবধানী ফেলে দিয়ে ভাই, বুঝি ভেঙেছে তার কানা। বৃষ্টি পড়ে ধুয়ে গেছে, হতেও পারে তাও, অনেকখানি সুধা; চকোর পাখি শব্দ এবার, কেমন […]

Continue Reading

কে বড়ো – ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত

আপনারে বড়ো বলে বড়ো সেই নয়, লোকে যারে বড়ো বলে বড়ো সেই হয়। বড়ো হওয়া সংসারেতে কঠিন ব্যাপার, সংসারে যে বড়ো হয় বড়ো গুণ যার। গুণেতে হইলে বড়ো বড়ো বলে সবে, বড়ো যদি হতে চাও ছোটো হও তবে। হিতাহিত না বুঝিয়া মরে অহঙ্কারে, নিজে বড়ো হতে চায় ছোটো বলি তারে।

Continue Reading

এখনো কাঁপিছে তরু – অক্ষয়কুমার বড়াল

এখনো কাঁপিছে তবু, মনে নাহি পড়ে ঠিক, এসেছিল—বসেছিল—ডেকেছিল হেথা পিক। কখনো কাঁপিছে নদ, ভাবিতেছে বার বার, ঢলিয়া কি পড়েছিল মেঘখানি বুকে তার। এখনো শ্বসিছে বায়ু, মনে যেন হয় হয়, ছিল তরু-লতা-কুঞ্জু-তৃণ-গুল্ম ফুলময়। এখনো ভবিছে ধরা, নহে বহুদিন-কথা, আকাশে নীলিমা ছিল, ভূমিতলে শ্যামলতা। এ রুদ্ধ কুটিরে মোর এসেছিল কোন্ জনা? এখনো আঁধারে যেন ভাসে তার রূপ-কণা। […]

Continue Reading